স্বদেশ ডেস্ক:
সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। সেখানে ঢাকার প্রতিটি অংশের আলাদা উন্নয়নের কথা তিনি উল্লেখ করেন।
আতিকুল বলেন, তার প্রধান লক্ষ্য এই নগরীকে কেবল বসবাস উপযোগী নয়, বরং নগরবাসীর জীবনমানও উন্নয়ন করা।
গত নয় মাস ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি কাজে লাগিয়ে আগামীর কাঙ্ক্ষিত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে ত্রিমুখী ইশতেহার ঘোষণা করেন আতিকুল ইসলাম।
সুস্থ ঢাকা গড়তে আতিকুল ইসলামের ইশতেহারে যে প্রস্তাবনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো:
* উন্নত বিশ্বের মত আইভিএম পদ্ধতিতে ঢাকার দুই সিটি, ওয়াসা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পাশের শহরের সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সাথে নিয়ে বছরব্যাপী মশা নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়ন।
* টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমিনবাজারে রিসোর্স রিকভারি ফ্যাসিলিটিজ স্থাপনের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বর্জ্য অপসারন ও জ্বালানি শক্তিতে রূপান্তর।
* তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে ও প্রতিবেশিদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়াতে শহরের ওয়ার্ডগুলোতে পাড়া উৎসবের আয়োজন।
* বস্তিবাসীর জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা।
* জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করে নগরবাসীর কাছে ফিরিয়ে দেয়া।
* সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত এলাকায় নারীবান্ধব স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি।
* মিরপুরে কর্পোরেশনের জমিতে বৃক্ষ ক্লিনিক ও পোষা প্রাণীর জন্য ক্লিনিক নির্মাণ
* এলাকাভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ তৈরি
* বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক পশু জবাইকেন্দ্র স্থাপন।
* উত্তর সিটির প্রতিটি স্থাপনারয় মাতৃদুগ্ধ পানের জন্য আলাদা কক্ষ তৈরি।
* বিশেষভাবে সক্ষম মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ।
* ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থানে মিস্ট ব্লোয়ার ও অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বায়ু দূষণ কমানো এবং
* প্রতিটি ওয়ার্ডে নানান সুযোগসুবিধা সম্বলিত ওয়ার্ড কমপ্লেক্ট তৈরি।
নিজের ইশতেহারে সচল ঢাকার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা জানান আতিকুল ইসলাম। তার পরিকল্পনাগুলো হলো :
ফুটপাথ দখলমুক্ত করে এলাকাভিত্তিক পথচারীবান্ধব ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের জন্য ফুটপাথ নেটওয়ার্ক তৈরি করা। হকারদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানযানজট নিরসনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, দক্ষিণ সিটি, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।
পরলোকগত আনিসুল হকের অসমাপ্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবাইকে নিয়ে ঢাকা বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করা। নিরাপদ পথচারী পারাপারের জন্য ঢাকায় জেব্রা ক্রসিংগুলোতে ডিজিটাল পুশ বাটন সিগন্যাল স্থাপন। নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে এস্কেলেটরসহ নতুন ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ। আধুনিক নগর ব্যবস্থার জন্য ই-টিকেটিংয়ের ব্যবস্থা। অ্যাপভিত্তিক সময়সূচি প্রবর্তন ও নারীবান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিত করা। সাইকেলের জন্য যেখানে সম্ভব আলাদা লেন তৈরি ও পার্কি এর ব্যবস্থা করা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা প্রবর্তন।
স্মার্ট বাস স্টপ ও বাস ট্রাক টার্নিমাল তৈরি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য গণ স্থাপনা ও গণপরিবহন নিশ্চিত করা।
প্রতি মহল্লার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন এবংব্যবস্ততম এলাকাগুলোতে বহুদল ও আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং কমপ্লেক্স তৈরি।
সুস্থ ও সচল ঢাকার পাশাপাশি আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলেতেও বদ্ধ পরিকর আতিকুল ইসলাম। আর এজন্যও তার রয়েছে আলাদা পরিকল্পনা।
যেমন:
সবার ঢাকা অ্যাপ এর মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার অভিযোগ গ্রহণ, সার্বক্ষণিক তদারকিসহ নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করা। এখানে মেয়রের সাথে নাগরিকদের সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকবে।
বায়দূষণ রোধে ইলেকট্রিক বাস সার্ভিস চালুডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য নাগরিক সুবিধা প্রদান।
ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমাতে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হেল্প ডেস্ক তৈরি।
ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা না করেই ডিএনসিসির কাচা বাজার ও মার্কেটগুলোর আধুনিকায়ন।
উত্তর ঢাকাকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে শুরুতে কয়েকটি এলাকাকে স্মার্ট নেইবারহুড হিসেবে গড়ে তোলা।
ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার তৈরি, যার মাধ্যমে শহরের নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থানার মতো কাজগুলো পরিচালনা।
তারুণ্যকে অনুপ্রাণিত করতে প্রতিটি এলাকায় সাংস্কৃতিক ও সেবাকেন্দ্র গঠন। যেখানে থাকবে হেল্প ডেস্ক, ট্রেনিং সেন্টার, লাইব্রেরি ইত্যাদি।
নগরের সার্বিক উন্নয়নে নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতিসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ।
প্রতিটি এলাকার কমিউনিটি সেন্টারগুলোর আধুনিকায়ন ও এগুলোর বহুমুখী ব্যবহার। যেমন ইয়োগা, আত্মরক্ষার বা গানের ক্লাস নিশ্চিত করা।
সব লেক, খাল সংষ্কার, উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসন, মশা নিয়ন্ত্রণ,পাবলিক স্পেস বাড়ানো, টেকসই পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে জনতার মুখোমুখি মেয়র শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যার সমাধান।